UX Myths (পর্ব ২): ডিজাইন কি 'Minimal' হলেই 'Simple' হয়ে যায়?
আজকালকার ট্রেন্ডটা খেয়াল করেছেন? সবকিছুতেই 'less is more' বা 'যত কম, তত ভালো' এর জয়জয়কার। সাদা দেয়াল, অল্প আসবাব, ক্লিন ডিজাইন—এই মিনিমালিজমের হাওয়া লেগেছে আমাদের ডিজিটাল জগতেও।



Credit:
Medium
ডিজাইনারদের মধ্যে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়: "ডিজাইনটাকে মিনিমাল করে ফেলো, ইউজারদের জন্য সিম্পল হয়ে যাবে।" অর্থাৎ, স্ক্রিন থেকে সবকিছু সরিয়ে দিয়ে কয়েকটি মাত্র বাটন রাখলেই ব্যবহারকারীর জীবন সহজ হয়ে যাবে।
সত্যিই কি তাই? মিনিমাল (Minimal) দেখতে হলেই কি কোনো কিছু ব্যবহার করতে সিম্পল (Simple) হয়ে যায়?
এই ভুল ধারণাটা ভাঙতে আজ আমরা দুটি রান্নাঘরের গল্প শুনব।
গল্প নং ১: বন্ধুর ঝকঝকে 'মিনিমালিস্ট' রান্নাঘর
ভাবুন, আপনি আপনার এক বন্ধুর নতুন কেনা ফ্ল্যাটে বেড়াতে গেছেন। বন্ধু খুব গর্ব করে তার রান্নাঘরটা দেখাচ্ছে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম:
কাউন্টারটপ একদম ফাঁকা, ঝকঝকে।
সবকিছু কেবিনেটের ভেতরে লুকানো।
কেবিনেটে কোনো হাতল পর্যন্ত নেই, চাপ দিলে খোলে (super minimal!)।
দেখতে যে কী অসাধারণ লাগছে! মনে হচ্ছে যেন কোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইন ম্যাগাজিনের পাতা থেকে উঠে এসেছে।
এখন বন্ধু আপনাকে বললো, “দোস্ত, একটু চা বানাবি?”
আপনি চা বানাতে গিয়ে পড়লেন মহাবিপদে। চিনি কোথায়? চাপাতা কোথায়? কাপ-পিরিচ কোন কেবিনেটে? আপনি একে একে পাঁচটা কেবিনেট খুলে, হাঁপাতে হাঁপাতে একেকটা জিনিস খুঁজে বের করলেন।
সিদ্ধান্ত: বন্ধুর রান্নাঘরটা দেখতে নিঃসন্দেহে মিনিমাল। কিন্তু সেখানে চা বানানোর কাজটা কি সিম্পল বা সহজ ছিল? একদমই না, বরং বেশ জটিল ছিল।
গল্প নং ২: আমার মায়ের 'কাজের' রান্নাঘর
এবার ভাবুন আপনার বা আমার মায়ের রান্নাঘরের কথা। সম্ভবত সেটা দেখতে অতটা ঝকঝকে বা ছবির মতো সুন্দর নয়।
চুলার পাশেই মসলার কৌটাগুলো সাজানো।
দেয়ালে খুন্তি, ছাকনি, ডাল ঘুটনি—সবকিছু ঝোলানো।
কাউন্টারের এক কোণায় পেঁয়াজ-রসুনের ঝুড়ি রাখা।
একজন মিনিমালিজম ভক্ত হয়তো বলবে, "এ তো খুবই অগোছালো!"
এখন মা আপনাকে বললেন, “বাবা, এক কাপ চা বানা তো।”
আপনি সম্ভবত চোখ বন্ধ করেই কাজটা সেরে ফেলতে পারবেন। কারণ লবণ কোথায়, চিনি কোথায়, আদা কোথায়—সবকিছু আপনার নখদর্পণে এবং হাতের নাগালে। কোনো কিছু খুঁজতে হলো না, কোনো বাড়তি চিন্তা করতে হলো না।
সিদ্ধান্ত: মায়ের রান্নাঘরটা দেখতে হয়তো মিনিমাল নয়, কিছুটা অগোছালো লাগতে পারে। কিন্তু সেখানে চা বানানোর কাজটা অবিশ্বাস্যভাবে সিম্পল বা সহজ।
তাহলে পার্থক্যটা কোথায়?
রান্নাঘরের গল্প থেকে আমরা যা বুঝলাম, তা হলো:
মিনিমালিজম (Minimalism): এটা একটা নান্দনিক স্টাইল (Aesthetic Style)। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ডিজাইনের উপাদান (elements) কমিয়ে আনা। এটা মূলত 'দেখতে কেমন'—তার উপর জোর দেয়।
সিমপ্লিসিটি (Simplicity): এটা একটা অভিজ্ঞতা (Experience)। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যবহারকারীর জন্য কোনো কাজ সম্পন্ন করা কতটা সহজ এবং স্বজ্ঞাত (intuitive), তা নিশ্চিত করা। এটা 'কাজ করে কীভাবে'—তার উপর জোর দেয়। এর প্রধান লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীর মানসিক চাপ (Cognitive Load) কমানো।
ডিজাইনের আসল লক্ষ্য হলো সিমপ্লিসিটি অর্জন করা, মিনিমালিজম নয়। মিনিমালিজম হতে পারে সিমপ্লিসিটিতে পৌঁছানোর একটি রাস্তা, কিন্তু ভুলভাবে প্রয়োগ করলে—যেমন বন্ধুর রান্নাঘরের ক্ষেত্রে হয়েছে—এটাই জটিলতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডিজিটাল দুনিয়ার উদাহরণ
অনেক ওয়েবসাইটে দেখবেন, ডিজাইন 'ক্লিন' দেখানোর জন্য মেন্যুর সব অপশন একটি মাত্র 'হ্যামবার্গার' (☰) আইকনের পেছনে লুকিয়ে রাখা হয়। এটা দেখতে মিনিমাল লাগে ঠিকই, কিন্তু ব্যবহারকারীকে তার প্রয়োজনীয় অপশন খুঁজে পেতে অতিরিক্ত এক-দুইবার ক্লিক করতে হয়, যা আসলে কাজটাকে আরও জটিল করে তোলে।
অন্যদিকে, Daraz বা Chaldal-এর মতো সাইটের হোমপেজ দেখুন। সেখানে অনেক ক্যাটাগরি, অনেক ছবি, অনেক অফার। দেখতে মোটেও মিনিমাল নয়। কিন্তু একজন নতুন ব্যবহারকারীও সহজেই বুঝতে পারেন কোথায় ক্লিক করে নিজের পছন্দের পণ্যটি খুঁজে বের করতে হবে। তাদের লক্ষ্য মিনিমাল দেখানো নয়; তাদের লক্ষ্য আপনার কেনাকাটার প্রক্রিয়াটাকে সিম্পল বা সহজ করে তোলা।
শেষ কথা
পোশাক যেমন শুধু সুন্দর হলেই হয় না, আরামদায়কও হতে হয়; ডিজাইনও তেমনি শুধু দেখতে মিনিমাল হলেই হবে না, তাকে অবশ্যই ব্যবহার করতে সিম্পল বা সহজ হতে হবে।
তাই পরেরবার কোনো ডিজাইনকে বিচার করার আগে শুধু তার বাহ্যিক সৌন্দর্য না দেখে, নিজেকে প্রশ্ন করুন: "এটা কি আমার মায়ের রান্নাঘরের মতো সহজ, নাকি ওই বন্ধুর ম্যাগাজিন থেকে উঠে আসা রান্নাঘরের মতো জটিল?"
উত্তরটা পেয়ে গেলেই আপনি মিনিমাল আর সিম্পলের আসল পার্থক্যটা ধরে ফেলবেন।
ডিজাইনারদের মধ্যে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়: "ডিজাইনটাকে মিনিমাল করে ফেলো, ইউজারদের জন্য সিম্পল হয়ে যাবে।" অর্থাৎ, স্ক্রিন থেকে সবকিছু সরিয়ে দিয়ে কয়েকটি মাত্র বাটন রাখলেই ব্যবহারকারীর জীবন সহজ হয়ে যাবে।
সত্যিই কি তাই? মিনিমাল (Minimal) দেখতে হলেই কি কোনো কিছু ব্যবহার করতে সিম্পল (Simple) হয়ে যায়?
এই ভুল ধারণাটা ভাঙতে আজ আমরা দুটি রান্নাঘরের গল্প শুনব।
গল্প নং ১: বন্ধুর ঝকঝকে 'মিনিমালিস্ট' রান্নাঘর
ভাবুন, আপনি আপনার এক বন্ধুর নতুন কেনা ফ্ল্যাটে বেড়াতে গেছেন। বন্ধু খুব গর্ব করে তার রান্নাঘরটা দেখাচ্ছে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম:
কাউন্টারটপ একদম ফাঁকা, ঝকঝকে।
সবকিছু কেবিনেটের ভেতরে লুকানো।
কেবিনেটে কোনো হাতল পর্যন্ত নেই, চাপ দিলে খোলে (super minimal!)।
দেখতে যে কী অসাধারণ লাগছে! মনে হচ্ছে যেন কোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইন ম্যাগাজিনের পাতা থেকে উঠে এসেছে।
এখন বন্ধু আপনাকে বললো, “দোস্ত, একটু চা বানাবি?”
আপনি চা বানাতে গিয়ে পড়লেন মহাবিপদে। চিনি কোথায়? চাপাতা কোথায়? কাপ-পিরিচ কোন কেবিনেটে? আপনি একে একে পাঁচটা কেবিনেট খুলে, হাঁপাতে হাঁপাতে একেকটা জিনিস খুঁজে বের করলেন।
সিদ্ধান্ত: বন্ধুর রান্নাঘরটা দেখতে নিঃসন্দেহে মিনিমাল। কিন্তু সেখানে চা বানানোর কাজটা কি সিম্পল বা সহজ ছিল? একদমই না, বরং বেশ জটিল ছিল।
গল্প নং ২: আমার মায়ের 'কাজের' রান্নাঘর
এবার ভাবুন আপনার বা আমার মায়ের রান্নাঘরের কথা। সম্ভবত সেটা দেখতে অতটা ঝকঝকে বা ছবির মতো সুন্দর নয়।
চুলার পাশেই মসলার কৌটাগুলো সাজানো।
দেয়ালে খুন্তি, ছাকনি, ডাল ঘুটনি—সবকিছু ঝোলানো।
কাউন্টারের এক কোণায় পেঁয়াজ-রসুনের ঝুড়ি রাখা।
একজন মিনিমালিজম ভক্ত হয়তো বলবে, "এ তো খুবই অগোছালো!"
এখন মা আপনাকে বললেন, “বাবা, এক কাপ চা বানা তো।”
আপনি সম্ভবত চোখ বন্ধ করেই কাজটা সেরে ফেলতে পারবেন। কারণ লবণ কোথায়, চিনি কোথায়, আদা কোথায়—সবকিছু আপনার নখদর্পণে এবং হাতের নাগালে। কোনো কিছু খুঁজতে হলো না, কোনো বাড়তি চিন্তা করতে হলো না।
সিদ্ধান্ত: মায়ের রান্নাঘরটা দেখতে হয়তো মিনিমাল নয়, কিছুটা অগোছালো লাগতে পারে। কিন্তু সেখানে চা বানানোর কাজটা অবিশ্বাস্যভাবে সিম্পল বা সহজ।
তাহলে পার্থক্যটা কোথায়?
রান্নাঘরের গল্প থেকে আমরা যা বুঝলাম, তা হলো:
মিনিমালিজম (Minimalism): এটা একটা নান্দনিক স্টাইল (Aesthetic Style)। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ডিজাইনের উপাদান (elements) কমিয়ে আনা। এটা মূলত 'দেখতে কেমন'—তার উপর জোর দেয়।
সিমপ্লিসিটি (Simplicity): এটা একটা অভিজ্ঞতা (Experience)। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যবহারকারীর জন্য কোনো কাজ সম্পন্ন করা কতটা সহজ এবং স্বজ্ঞাত (intuitive), তা নিশ্চিত করা। এটা 'কাজ করে কীভাবে'—তার উপর জোর দেয়। এর প্রধান লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীর মানসিক চাপ (Cognitive Load) কমানো।
ডিজাইনের আসল লক্ষ্য হলো সিমপ্লিসিটি অর্জন করা, মিনিমালিজম নয়। মিনিমালিজম হতে পারে সিমপ্লিসিটিতে পৌঁছানোর একটি রাস্তা, কিন্তু ভুলভাবে প্রয়োগ করলে—যেমন বন্ধুর রান্নাঘরের ক্ষেত্রে হয়েছে—এটাই জটিলতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডিজিটাল দুনিয়ার উদাহরণ
অনেক ওয়েবসাইটে দেখবেন, ডিজাইন 'ক্লিন' দেখানোর জন্য মেন্যুর সব অপশন একটি মাত্র 'হ্যামবার্গার' (☰) আইকনের পেছনে লুকিয়ে রাখা হয়। এটা দেখতে মিনিমাল লাগে ঠিকই, কিন্তু ব্যবহারকারীকে তার প্রয়োজনীয় অপশন খুঁজে পেতে অতিরিক্ত এক-দুইবার ক্লিক করতে হয়, যা আসলে কাজটাকে আরও জটিল করে তোলে।
অন্যদিকে, Daraz বা Chaldal-এর মতো সাইটের হোমপেজ দেখুন। সেখানে অনেক ক্যাটাগরি, অনেক ছবি, অনেক অফার। দেখতে মোটেও মিনিমাল নয়। কিন্তু একজন নতুন ব্যবহারকারীও সহজেই বুঝতে পারেন কোথায় ক্লিক করে নিজের পছন্দের পণ্যটি খুঁজে বের করতে হবে। তাদের লক্ষ্য মিনিমাল দেখানো নয়; তাদের লক্ষ্য আপনার কেনাকাটার প্রক্রিয়াটাকে সিম্পল বা সহজ করে তোলা।
শেষ কথা
পোশাক যেমন শুধু সুন্দর হলেই হয় না, আরামদায়কও হতে হয়; ডিজাইনও তেমনি শুধু দেখতে মিনিমাল হলেই হবে না, তাকে অবশ্যই ব্যবহার করতে সিম্পল বা সহজ হতে হবে।
তাই পরেরবার কোনো ডিজাইনকে বিচার করার আগে শুধু তার বাহ্যিক সৌন্দর্য না দেখে, নিজেকে প্রশ্ন করুন: "এটা কি আমার মায়ের রান্নাঘরের মতো সহজ, নাকি ওই বন্ধুর ম্যাগাজিন থেকে উঠে আসা রান্নাঘরের মতো জটিল?"
উত্তরটা পেয়ে গেলেই আপনি মিনিমাল আর সিম্পলের আসল পার্থক্যটা ধরে ফেলবেন।
ডিজাইনারদের মধ্যে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়: "ডিজাইনটাকে মিনিমাল করে ফেলো, ইউজারদের জন্য সিম্পল হয়ে যাবে।" অর্থাৎ, স্ক্রিন থেকে সবকিছু সরিয়ে দিয়ে কয়েকটি মাত্র বাটন রাখলেই ব্যবহারকারীর জীবন সহজ হয়ে যাবে।
সত্যিই কি তাই? মিনিমাল (Minimal) দেখতে হলেই কি কোনো কিছু ব্যবহার করতে সিম্পল (Simple) হয়ে যায়?
এই ভুল ধারণাটা ভাঙতে আজ আমরা দুটি রান্নাঘরের গল্প শুনব।
গল্প নং ১: বন্ধুর ঝকঝকে 'মিনিমালিস্ট' রান্নাঘর
ভাবুন, আপনি আপনার এক বন্ধুর নতুন কেনা ফ্ল্যাটে বেড়াতে গেছেন। বন্ধু খুব গর্ব করে তার রান্নাঘরটা দেখাচ্ছে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম:
কাউন্টারটপ একদম ফাঁকা, ঝকঝকে।
সবকিছু কেবিনেটের ভেতরে লুকানো।
কেবিনেটে কোনো হাতল পর্যন্ত নেই, চাপ দিলে খোলে (super minimal!)।
দেখতে যে কী অসাধারণ লাগছে! মনে হচ্ছে যেন কোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইন ম্যাগাজিনের পাতা থেকে উঠে এসেছে।
এখন বন্ধু আপনাকে বললো, “দোস্ত, একটু চা বানাবি?”
আপনি চা বানাতে গিয়ে পড়লেন মহাবিপদে। চিনি কোথায়? চাপাতা কোথায়? কাপ-পিরিচ কোন কেবিনেটে? আপনি একে একে পাঁচটা কেবিনেট খুলে, হাঁপাতে হাঁপাতে একেকটা জিনিস খুঁজে বের করলেন।
সিদ্ধান্ত: বন্ধুর রান্নাঘরটা দেখতে নিঃসন্দেহে মিনিমাল। কিন্তু সেখানে চা বানানোর কাজটা কি সিম্পল বা সহজ ছিল? একদমই না, বরং বেশ জটিল ছিল।
গল্প নং ২: আমার মায়ের 'কাজের' রান্নাঘর
এবার ভাবুন আপনার বা আমার মায়ের রান্নাঘরের কথা। সম্ভবত সেটা দেখতে অতটা ঝকঝকে বা ছবির মতো সুন্দর নয়।
চুলার পাশেই মসলার কৌটাগুলো সাজানো।
দেয়ালে খুন্তি, ছাকনি, ডাল ঘুটনি—সবকিছু ঝোলানো।
কাউন্টারের এক কোণায় পেঁয়াজ-রসুনের ঝুড়ি রাখা।
একজন মিনিমালিজম ভক্ত হয়তো বলবে, "এ তো খুবই অগোছালো!"
এখন মা আপনাকে বললেন, “বাবা, এক কাপ চা বানা তো।”
আপনি সম্ভবত চোখ বন্ধ করেই কাজটা সেরে ফেলতে পারবেন। কারণ লবণ কোথায়, চিনি কোথায়, আদা কোথায়—সবকিছু আপনার নখদর্পণে এবং হাতের নাগালে। কোনো কিছু খুঁজতে হলো না, কোনো বাড়তি চিন্তা করতে হলো না।
সিদ্ধান্ত: মায়ের রান্নাঘরটা দেখতে হয়তো মিনিমাল নয়, কিছুটা অগোছালো লাগতে পারে। কিন্তু সেখানে চা বানানোর কাজটা অবিশ্বাস্যভাবে সিম্পল বা সহজ।
তাহলে পার্থক্যটা কোথায়?
রান্নাঘরের গল্প থেকে আমরা যা বুঝলাম, তা হলো:
মিনিমালিজম (Minimalism): এটা একটা নান্দনিক স্টাইল (Aesthetic Style)। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ডিজাইনের উপাদান (elements) কমিয়ে আনা। এটা মূলত 'দেখতে কেমন'—তার উপর জোর দেয়।
সিমপ্লিসিটি (Simplicity): এটা একটা অভিজ্ঞতা (Experience)। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যবহারকারীর জন্য কোনো কাজ সম্পন্ন করা কতটা সহজ এবং স্বজ্ঞাত (intuitive), তা নিশ্চিত করা। এটা 'কাজ করে কীভাবে'—তার উপর জোর দেয়। এর প্রধান লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীর মানসিক চাপ (Cognitive Load) কমানো।
ডিজাইনের আসল লক্ষ্য হলো সিমপ্লিসিটি অর্জন করা, মিনিমালিজম নয়। মিনিমালিজম হতে পারে সিমপ্লিসিটিতে পৌঁছানোর একটি রাস্তা, কিন্তু ভুলভাবে প্রয়োগ করলে—যেমন বন্ধুর রান্নাঘরের ক্ষেত্রে হয়েছে—এটাই জটিলতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডিজিটাল দুনিয়ার উদাহরণ
অনেক ওয়েবসাইটে দেখবেন, ডিজাইন 'ক্লিন' দেখানোর জন্য মেন্যুর সব অপশন একটি মাত্র 'হ্যামবার্গার' (☰) আইকনের পেছনে লুকিয়ে রাখা হয়। এটা দেখতে মিনিমাল লাগে ঠিকই, কিন্তু ব্যবহারকারীকে তার প্রয়োজনীয় অপশন খুঁজে পেতে অতিরিক্ত এক-দুইবার ক্লিক করতে হয়, যা আসলে কাজটাকে আরও জটিল করে তোলে।
অন্যদিকে, Daraz বা Chaldal-এর মতো সাইটের হোমপেজ দেখুন। সেখানে অনেক ক্যাটাগরি, অনেক ছবি, অনেক অফার। দেখতে মোটেও মিনিমাল নয়। কিন্তু একজন নতুন ব্যবহারকারীও সহজেই বুঝতে পারেন কোথায় ক্লিক করে নিজের পছন্দের পণ্যটি খুঁজে বের করতে হবে। তাদের লক্ষ্য মিনিমাল দেখানো নয়; তাদের লক্ষ্য আপনার কেনাকাটার প্রক্রিয়াটাকে সিম্পল বা সহজ করে তোলা।
শেষ কথা
পোশাক যেমন শুধু সুন্দর হলেই হয় না, আরামদায়কও হতে হয়; ডিজাইনও তেমনি শুধু দেখতে মিনিমাল হলেই হবে না, তাকে অবশ্যই ব্যবহার করতে সিম্পল বা সহজ হতে হবে।
তাই পরেরবার কোনো ডিজাইনকে বিচার করার আগে শুধু তার বাহ্যিক সৌন্দর্য না দেখে, নিজেকে প্রশ্ন করুন: "এটা কি আমার মায়ের রান্নাঘরের মতো সহজ, নাকি ওই বন্ধুর ম্যাগাজিন থেকে উঠে আসা রান্নাঘরের মতো জটিল?"
উত্তরটা পেয়ে গেলেই আপনি মিনিমাল আর সিম্পলের আসল পার্থক্যটা ধরে ফেলবেন।
এইসব লেখা নিয়ে কি একটা নিউজলেটার চালু করা উচিত?
মেইলে জানাতে পারেন, ভালো সাড়া পেলে শুরু করতে পারি!