Myths

7 min read

UX Myths (পর্ব ১১): যত বেশি অপশন, ইউজার তত বেশি খুশি!

যেকোনো প্রোডাক্টের নতুন সংস্করণ আনার সময় একটি চিন্তা প্রায়ই সবার মাথায় আসে: "আমাদের অ্যাপে আরও ফিচার যোগ করতে হবে!" "ইউজারদের আরও অপশন দিতে হবে, তারা যেন নিজেদের ইচ্ছামতো সবকিছু করতে পারে!" "কম্পিটিটর ১০টা ফিচার দিচ্ছে, আমাদের ১৫টা দিতে হবে!"

Credit:

Open Source

এই 'More is Better' বা 'যত গুড়, তত মিষ্টি' ধারণাটি হলো UX জগতের অন্যতম বড় এবং প্রচলিত একটি মিথ। আমরা ভাবি, ব্যবহারকারীকে পছন্দের অসীম স্বাধীনতা দিলে সে রাজার মতো অনুভব করবে এবং আনন্দে আমাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করবে।

কিন্তু মনোবিজ্ঞান আর বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, অতিরিক্ত অপশন বা ফিচার ব্যবহারকারীকে খুশি করার বদলে উল্টো তাকে প্যারালাইজড (Paralyzed), বিরক্ত এবং চূড়ান্তভাবে অসন্তুষ্ট করে তোলে।

এই মানসিক প্যারালাইসিস-এর অভিজ্ঞতা নিতে চলুন আজ আমরা ঢাকার দুটি পাশাপাশি রেস্টুরেন্টে খেতে যাই।


গল্প: দুই রেস্টুরেন্টের মেন্যু কার্ড

রেস্টুরেন্ট 'ক': দ্য 'সবকিছু পাওয়া যায়' রেস্টুরেন্ট ভাবুন, আপনি এমন এক রেস্টুরেন্টে গেছেন যার মেন্যু কার্ডটা একটা ছোটখাটো বইয়ের মতো। প্রায় ২০০টি আইটেম: চাইনিজ, থাই, ইন্ডিয়ান, কাবাব, পাস্তা, বার্গার, স্যুপ, স্টেক— কী নেই সেখানে!

আপনি আর আপনার বন্ধুরা মেন্যু নিয়ে বসেছেন, কিন্তু ১৫ মিনিট পার হয়ে গেলেও কী অর্ডার করবেন, তা ঠিক করতে পারছেন না। আপনার মনে হচ্ছে:

  • "পাস্তাটা অর্ডার করলে ওদের বিখ্যাত কাবাবটা মিস করবো না তো?"

  • "এদের থাই স্যুপটা কি আসলেই অথেনটিক?"

  • "নাকি রিস্ক না নিয়ে ইন্ডিয়ান খাওয়াই ভালো হবে?"

এই করতে করতে আপনি চরম দ্বিধা আর উদ্বেগে ভুগছেন। এই অবস্থাকেই মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলে Analysis Paralysis বা সিদ্ধান্তহীনতার পক্ষাঘাত। শেষ পর্যন্ত যা-হোক একটা কিছু অর্ডার করলেও আপনার মনে খচখচানি থেকেই যায়, "অন্যটা নিলে হয়তো বেশি ভালো হতো!"

রেস্টুরেন্ট 'খ': দ্য 'কাচ্চি স্পেশালিস্ট' এবার ভাবুন, আপনি পাশের রেস্টুরেন্টে গেলেন যারা শুধু কাচ্চি বিরিয়ানি বানানোর জন্য বিখ্যাত। তাদের মেন্যুতে মাত্র ৫টি আইটেম: কাচ্চি (ফুল/হাফ), চিকেন রোস্ট, বোরহানি, ফিরনি আর কোমল পানীয়।

এখানে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে ৩০ সেকেন্ডও লাগবে না। আপনি জানেন তারা কীসে সেরা, এবং আপনি শতভাগ আত্মবিশ্বাসের সাথে আপনার অর্ডারটি করতে পারছেন। খাওয়ার পর আপনার মনেও পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি কাজ করবে।

গল্পের শিক্ষা: প্রথম রেস্টুরেন্ট আপনাকে শত শত 'চয়েস' দিয়ে আসলে আপনার মানসিক চাপ এবং সিদ্ধান্তহীনতা বাড়িয়ে দিয়েছে। আর দ্বিতীয় রেস্টুরেন্ট আপনাকে সীমিত কিন্তু সেরা 'চয়েস' দিয়ে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ এবং আনন্দদায়ক করে তুলেছে।


এর পেছনের বিজ্ঞান কী?

এই ঘটনাগুলোর পেছনে দুটি বিখ্যাত নীতি কাজ করে:

  1. হিক'স ল (Hick's Law): মনোবিজ্ঞানের এই নীতিটি সোজা কথায় বলে—সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপশন যত বাড়বে, সিদ্ধান্ত নিতে সময়ও তত বেশি লাগবে। অপশন দ্বিগুণ হলে সময় দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি লাগতে পারে।

  2. প্যারাডক্স অফ চয়েস (The Paradox of Choice): মনোবিজ্ঞানী ব্যারি শোয়ার্টজ তার বিখ্যাত বইয়ে দেখিয়েছেন যে, কিছু অপশন থাকা ভালো, কিন্তু অপশনের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে আমাদের সন্তুষ্টির মাত্রা উল্টো কমতে শুরু করে। কারণ, আমরা সবসময় সম্ভাব্য সেরা পছন্দটি হারানোর ভয়ে থাকি।


ফিচারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য

এই একই নিয়ম শুধু পছন্দের ক্ষেত্রেই নয়, প্রোডাক্টের ফিচারের ক্ষেত্রেও খাটে। একে বলা হয় 'ফিচার ব্লোট' (Feature Bloat)

পুরোনো দিনের টিভির রিমোটের কথা ভাবুন, যেখানে ৫০-৬০টা প্রায় একই রকম দেখতে বাটন থাকতো। আপনি হয়তো সারাজীবনে ব্যবহার করতেন মাত্র ৫-৬টা। বাকি বাটনগুলো ছিল অপ্রয়োজনীয় আবর্জনা, যা রিমোটটাকে ব্যবহার করতে আরও কঠিন করে তুলতো। এখনকার স্মার্ট টিভির রিমোট দেখুন, মাত্র কয়েকটি বাটন দিয়ে মূল কাজগুলো কত সহজে এবং সুন্দরভাবে করা যায়।


শেষ কথা

আপনার কাজ ব্যবহারকারীকে একগাদা ফিচার বা অপশনের সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া নয়। আপনার কাজ হলো তাদের মূল সমস্যাটা বোঝা এবং সেই সমস্যার সবচেয়ে সহজ, দ্রুত এবং কার্যকর সমাধানটি তাদের সামনে তুলে ধরা। ব্যবহারকারীকে অপশন দিয়ে বিভ্রান্ত করার বদলে, তাদের হয়ে সেরা সিদ্ধান্তটি নিয়ে দিন।

একজন সেরা শেফ তার গ্রাহককে খুশি করার জন্য মেন্যুতে ২০০টা আইটেম রাখে না; সে কয়েকটি সেরা ডিশ পরিবেশন করে যা সে দক্ষতার সাথে তৈরি করতে পারে। আপনার প্রোডাক্টের ডিজাইনার বা ম্যানেজার হিসেবে আপনিও একজন শেফ।

নিজেকে প্রশ্ন করুন: আপনার মেন্যুকার্ডটি কি ব্যবহারকারীকে দ্বিধায় ফেলছে, নাকি তাকে আত্মবিশ্বাসের সাথে সেরা খাবারটি বেছে নিতে সাহায্য করছে?

এই 'More is Better' বা 'যত গুড়, তত মিষ্টি' ধারণাটি হলো UX জগতের অন্যতম বড় এবং প্রচলিত একটি মিথ। আমরা ভাবি, ব্যবহারকারীকে পছন্দের অসীম স্বাধীনতা দিলে সে রাজার মতো অনুভব করবে এবং আনন্দে আমাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করবে।

কিন্তু মনোবিজ্ঞান আর বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, অতিরিক্ত অপশন বা ফিচার ব্যবহারকারীকে খুশি করার বদলে উল্টো তাকে প্যারালাইজড (Paralyzed), বিরক্ত এবং চূড়ান্তভাবে অসন্তুষ্ট করে তোলে।

এই মানসিক প্যারালাইসিস-এর অভিজ্ঞতা নিতে চলুন আজ আমরা ঢাকার দুটি পাশাপাশি রেস্টুরেন্টে খেতে যাই।


গল্প: দুই রেস্টুরেন্টের মেন্যু কার্ড

রেস্টুরেন্ট 'ক': দ্য 'সবকিছু পাওয়া যায়' রেস্টুরেন্ট ভাবুন, আপনি এমন এক রেস্টুরেন্টে গেছেন যার মেন্যু কার্ডটা একটা ছোটখাটো বইয়ের মতো। প্রায় ২০০টি আইটেম: চাইনিজ, থাই, ইন্ডিয়ান, কাবাব, পাস্তা, বার্গার, স্যুপ, স্টেক— কী নেই সেখানে!

আপনি আর আপনার বন্ধুরা মেন্যু নিয়ে বসেছেন, কিন্তু ১৫ মিনিট পার হয়ে গেলেও কী অর্ডার করবেন, তা ঠিক করতে পারছেন না। আপনার মনে হচ্ছে:

  • "পাস্তাটা অর্ডার করলে ওদের বিখ্যাত কাবাবটা মিস করবো না তো?"

  • "এদের থাই স্যুপটা কি আসলেই অথেনটিক?"

  • "নাকি রিস্ক না নিয়ে ইন্ডিয়ান খাওয়াই ভালো হবে?"

এই করতে করতে আপনি চরম দ্বিধা আর উদ্বেগে ভুগছেন। এই অবস্থাকেই মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলে Analysis Paralysis বা সিদ্ধান্তহীনতার পক্ষাঘাত। শেষ পর্যন্ত যা-হোক একটা কিছু অর্ডার করলেও আপনার মনে খচখচানি থেকেই যায়, "অন্যটা নিলে হয়তো বেশি ভালো হতো!"

রেস্টুরেন্ট 'খ': দ্য 'কাচ্চি স্পেশালিস্ট' এবার ভাবুন, আপনি পাশের রেস্টুরেন্টে গেলেন যারা শুধু কাচ্চি বিরিয়ানি বানানোর জন্য বিখ্যাত। তাদের মেন্যুতে মাত্র ৫টি আইটেম: কাচ্চি (ফুল/হাফ), চিকেন রোস্ট, বোরহানি, ফিরনি আর কোমল পানীয়।

এখানে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে ৩০ সেকেন্ডও লাগবে না। আপনি জানেন তারা কীসে সেরা, এবং আপনি শতভাগ আত্মবিশ্বাসের সাথে আপনার অর্ডারটি করতে পারছেন। খাওয়ার পর আপনার মনেও পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি কাজ করবে।

গল্পের শিক্ষা: প্রথম রেস্টুরেন্ট আপনাকে শত শত 'চয়েস' দিয়ে আসলে আপনার মানসিক চাপ এবং সিদ্ধান্তহীনতা বাড়িয়ে দিয়েছে। আর দ্বিতীয় রেস্টুরেন্ট আপনাকে সীমিত কিন্তু সেরা 'চয়েস' দিয়ে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ এবং আনন্দদায়ক করে তুলেছে।


এর পেছনের বিজ্ঞান কী?

এই ঘটনাগুলোর পেছনে দুটি বিখ্যাত নীতি কাজ করে:

  1. হিক'স ল (Hick's Law): মনোবিজ্ঞানের এই নীতিটি সোজা কথায় বলে—সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপশন যত বাড়বে, সিদ্ধান্ত নিতে সময়ও তত বেশি লাগবে। অপশন দ্বিগুণ হলে সময় দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি লাগতে পারে।

  2. প্যারাডক্স অফ চয়েস (The Paradox of Choice): মনোবিজ্ঞানী ব্যারি শোয়ার্টজ তার বিখ্যাত বইয়ে দেখিয়েছেন যে, কিছু অপশন থাকা ভালো, কিন্তু অপশনের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে আমাদের সন্তুষ্টির মাত্রা উল্টো কমতে শুরু করে। কারণ, আমরা সবসময় সম্ভাব্য সেরা পছন্দটি হারানোর ভয়ে থাকি।


ফিচারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য

এই একই নিয়ম শুধু পছন্দের ক্ষেত্রেই নয়, প্রোডাক্টের ফিচারের ক্ষেত্রেও খাটে। একে বলা হয় 'ফিচার ব্লোট' (Feature Bloat)

পুরোনো দিনের টিভির রিমোটের কথা ভাবুন, যেখানে ৫০-৬০টা প্রায় একই রকম দেখতে বাটন থাকতো। আপনি হয়তো সারাজীবনে ব্যবহার করতেন মাত্র ৫-৬টা। বাকি বাটনগুলো ছিল অপ্রয়োজনীয় আবর্জনা, যা রিমোটটাকে ব্যবহার করতে আরও কঠিন করে তুলতো। এখনকার স্মার্ট টিভির রিমোট দেখুন, মাত্র কয়েকটি বাটন দিয়ে মূল কাজগুলো কত সহজে এবং সুন্দরভাবে করা যায়।


শেষ কথা

আপনার কাজ ব্যবহারকারীকে একগাদা ফিচার বা অপশনের সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া নয়। আপনার কাজ হলো তাদের মূল সমস্যাটা বোঝা এবং সেই সমস্যার সবচেয়ে সহজ, দ্রুত এবং কার্যকর সমাধানটি তাদের সামনে তুলে ধরা। ব্যবহারকারীকে অপশন দিয়ে বিভ্রান্ত করার বদলে, তাদের হয়ে সেরা সিদ্ধান্তটি নিয়ে দিন।

একজন সেরা শেফ তার গ্রাহককে খুশি করার জন্য মেন্যুতে ২০০টা আইটেম রাখে না; সে কয়েকটি সেরা ডিশ পরিবেশন করে যা সে দক্ষতার সাথে তৈরি করতে পারে। আপনার প্রোডাক্টের ডিজাইনার বা ম্যানেজার হিসেবে আপনিও একজন শেফ।

নিজেকে প্রশ্ন করুন: আপনার মেন্যুকার্ডটি কি ব্যবহারকারীকে দ্বিধায় ফেলছে, নাকি তাকে আত্মবিশ্বাসের সাথে সেরা খাবারটি বেছে নিতে সাহায্য করছে?

এই 'More is Better' বা 'যত গুড়, তত মিষ্টি' ধারণাটি হলো UX জগতের অন্যতম বড় এবং প্রচলিত একটি মিথ। আমরা ভাবি, ব্যবহারকারীকে পছন্দের অসীম স্বাধীনতা দিলে সে রাজার মতো অনুভব করবে এবং আনন্দে আমাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করবে।

কিন্তু মনোবিজ্ঞান আর বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, অতিরিক্ত অপশন বা ফিচার ব্যবহারকারীকে খুশি করার বদলে উল্টো তাকে প্যারালাইজড (Paralyzed), বিরক্ত এবং চূড়ান্তভাবে অসন্তুষ্ট করে তোলে।

এই মানসিক প্যারালাইসিস-এর অভিজ্ঞতা নিতে চলুন আজ আমরা ঢাকার দুটি পাশাপাশি রেস্টুরেন্টে খেতে যাই।


গল্প: দুই রেস্টুরেন্টের মেন্যু কার্ড

রেস্টুরেন্ট 'ক': দ্য 'সবকিছু পাওয়া যায়' রেস্টুরেন্ট ভাবুন, আপনি এমন এক রেস্টুরেন্টে গেছেন যার মেন্যু কার্ডটা একটা ছোটখাটো বইয়ের মতো। প্রায় ২০০টি আইটেম: চাইনিজ, থাই, ইন্ডিয়ান, কাবাব, পাস্তা, বার্গার, স্যুপ, স্টেক— কী নেই সেখানে!

আপনি আর আপনার বন্ধুরা মেন্যু নিয়ে বসেছেন, কিন্তু ১৫ মিনিট পার হয়ে গেলেও কী অর্ডার করবেন, তা ঠিক করতে পারছেন না। আপনার মনে হচ্ছে:

  • "পাস্তাটা অর্ডার করলে ওদের বিখ্যাত কাবাবটা মিস করবো না তো?"

  • "এদের থাই স্যুপটা কি আসলেই অথেনটিক?"

  • "নাকি রিস্ক না নিয়ে ইন্ডিয়ান খাওয়াই ভালো হবে?"

এই করতে করতে আপনি চরম দ্বিধা আর উদ্বেগে ভুগছেন। এই অবস্থাকেই মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলে Analysis Paralysis বা সিদ্ধান্তহীনতার পক্ষাঘাত। শেষ পর্যন্ত যা-হোক একটা কিছু অর্ডার করলেও আপনার মনে খচখচানি থেকেই যায়, "অন্যটা নিলে হয়তো বেশি ভালো হতো!"

রেস্টুরেন্ট 'খ': দ্য 'কাচ্চি স্পেশালিস্ট' এবার ভাবুন, আপনি পাশের রেস্টুরেন্টে গেলেন যারা শুধু কাচ্চি বিরিয়ানি বানানোর জন্য বিখ্যাত। তাদের মেন্যুতে মাত্র ৫টি আইটেম: কাচ্চি (ফুল/হাফ), চিকেন রোস্ট, বোরহানি, ফিরনি আর কোমল পানীয়।

এখানে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে ৩০ সেকেন্ডও লাগবে না। আপনি জানেন তারা কীসে সেরা, এবং আপনি শতভাগ আত্মবিশ্বাসের সাথে আপনার অর্ডারটি করতে পারছেন। খাওয়ার পর আপনার মনেও পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি কাজ করবে।

গল্পের শিক্ষা: প্রথম রেস্টুরেন্ট আপনাকে শত শত 'চয়েস' দিয়ে আসলে আপনার মানসিক চাপ এবং সিদ্ধান্তহীনতা বাড়িয়ে দিয়েছে। আর দ্বিতীয় রেস্টুরেন্ট আপনাকে সীমিত কিন্তু সেরা 'চয়েস' দিয়ে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ এবং আনন্দদায়ক করে তুলেছে।


এর পেছনের বিজ্ঞান কী?

এই ঘটনাগুলোর পেছনে দুটি বিখ্যাত নীতি কাজ করে:

  1. হিক'স ল (Hick's Law): মনোবিজ্ঞানের এই নীতিটি সোজা কথায় বলে—সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপশন যত বাড়বে, সিদ্ধান্ত নিতে সময়ও তত বেশি লাগবে। অপশন দ্বিগুণ হলে সময় দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি লাগতে পারে।

  2. প্যারাডক্স অফ চয়েস (The Paradox of Choice): মনোবিজ্ঞানী ব্যারি শোয়ার্টজ তার বিখ্যাত বইয়ে দেখিয়েছেন যে, কিছু অপশন থাকা ভালো, কিন্তু অপশনের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে আমাদের সন্তুষ্টির মাত্রা উল্টো কমতে শুরু করে। কারণ, আমরা সবসময় সম্ভাব্য সেরা পছন্দটি হারানোর ভয়ে থাকি।


ফিচারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য

এই একই নিয়ম শুধু পছন্দের ক্ষেত্রেই নয়, প্রোডাক্টের ফিচারের ক্ষেত্রেও খাটে। একে বলা হয় 'ফিচার ব্লোট' (Feature Bloat)

পুরোনো দিনের টিভির রিমোটের কথা ভাবুন, যেখানে ৫০-৬০টা প্রায় একই রকম দেখতে বাটন থাকতো। আপনি হয়তো সারাজীবনে ব্যবহার করতেন মাত্র ৫-৬টা। বাকি বাটনগুলো ছিল অপ্রয়োজনীয় আবর্জনা, যা রিমোটটাকে ব্যবহার করতে আরও কঠিন করে তুলতো। এখনকার স্মার্ট টিভির রিমোট দেখুন, মাত্র কয়েকটি বাটন দিয়ে মূল কাজগুলো কত সহজে এবং সুন্দরভাবে করা যায়।


শেষ কথা

আপনার কাজ ব্যবহারকারীকে একগাদা ফিচার বা অপশনের সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া নয়। আপনার কাজ হলো তাদের মূল সমস্যাটা বোঝা এবং সেই সমস্যার সবচেয়ে সহজ, দ্রুত এবং কার্যকর সমাধানটি তাদের সামনে তুলে ধরা। ব্যবহারকারীকে অপশন দিয়ে বিভ্রান্ত করার বদলে, তাদের হয়ে সেরা সিদ্ধান্তটি নিয়ে দিন।

একজন সেরা শেফ তার গ্রাহককে খুশি করার জন্য মেন্যুতে ২০০টা আইটেম রাখে না; সে কয়েকটি সেরা ডিশ পরিবেশন করে যা সে দক্ষতার সাথে তৈরি করতে পারে। আপনার প্রোডাক্টের ডিজাইনার বা ম্যানেজার হিসেবে আপনিও একজন শেফ।

নিজেকে প্রশ্ন করুন: আপনার মেন্যুকার্ডটি কি ব্যবহারকারীকে দ্বিধায় ফেলছে, নাকি তাকে আত্মবিশ্বাসের সাথে সেরা খাবারটি বেছে নিতে সাহায্য করছে?

Myths

7 min read

এইসব লেখা নিয়ে কি একটা নিউজলেটার চালু করা উচিত?

মেইলে জানাতে পারেন, ভালো সাড়া পেলে শুরু করতে পারি!

Create a free website with Framer, the website builder loved by startups, designers and agencies.